এপ্রিল ১২, ২০২০
করোনা প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে জেলা প্রশাসন: ২ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা জরিমানা
ডেস্ক রিপোর্ট : সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখা, সরকারি আদেশ অমান্য করে ৬টার পর দোকান খোলা রাখা ও বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করার অপরাধে সাতক্ষীরায় জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন অভিযানে এখন পর্যন্ত সর্বশেষ ২৭টি অভিযানে ৫৭টি মামলায় ২ লক্ষ ২৪ হাজার ৩শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। যা গতকালের প্রায় ৩ গুন। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৫টি মামলায় ২ হাজার ৪শ’ টাকা, তালা উপজেলায় ১টি মামলায় ৩০ হাজার টাকা, কালিগঞ্জ উপজেলায় ২টি মামলায় ৪ হাজার টাকা, শ্যামনগর উপজেলায় ১৮টি মামলায় ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫শ’ টাকা, আশাশুনি উপজেলায় ১০টি মামলায় ৪ হাজার ২শ’ টাকা, কলারোয়া উপজেলায় ৫টি মামলায় ২ হাজার ৪শ’ টাকা এবং জেলা প্রশাসনের ১৪ মামলায় ৩৩ হাজার ৮শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। রোববার (১২ এপ্রিল) বিকেলে জেলা প্রশাসন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পাশাপাশি সাতক্ষীরা জেলার প্রতিটি উপজেলায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সহকারী কমিশনারদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসারের সমন্বয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, সচেতনতা বৃদ্ধি, হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতকরন অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। এদিকে গত ২-৩ দিনে নারায়নগঞ্জ, মাদারিপুর এবং শরিয়তপুর থেকে সেখানে ঘোষিত লক ডাউনের মধ্যেও ৩ হাজারের মত মানুষ সাতক্ষীরা জেলাতে এসেছে। এদের মধ্যে ৭শ’ ৮৪ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে ও ২ হাজার ৫০ জনকে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আনসার ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে টহল জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। যে সকল মানুষ লক ডাউন উপেক্ষা করে বিভিন্ন জেলা থেকে সাতক্ষীরা জেলা সীমান্তে আসছে তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া অমানবিক। যারা ফিরে আসছেন তাদের প্রাতিষ্ঠানিক এবং হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যবস্থাও গ্রহন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্র আরও জানায়, সাতক্ষীরা থেকে করোনা টেস্টের জন্য এ পর্যন্ত ১শ’ ৪৩ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে ৯ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। আশার কথা হলো সবাই করোনা নেগেটিভ। এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় ইউনিয়ন ভিত্তিক দুস্থ ও সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বাহিরে থাকা গরিব মানুষের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের ক্ষেত্রে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় থেকে পাওয়া মোট বরাদ্দ থেকে ইতোমধ্যে উপজেলা, পৌরসভার অনুকূলে ৬০০ টন চাল এবং ২০ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌরসভার মেয়রগণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করে এই ত্রাণ সহায়তা কর্মহীন হয়ে পড়া দুস্থ অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে উপজেলা ও পৌরসভার ৪২ হাজার ৫শ’ পরিবারের মাঝে সরকারি ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলায় হিজড়া জনগোষ্ঠীর ৭০ জন সদস্যের সমাজ কল্যাণ তহবিল হতে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। সকল সরকারি ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে সকলকে ব্যাগের গায়ে “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার” কতাটি লিখে দেয়া হচ্ছে’। সরকারি ত্রাণের তালিকা এবং বিতরণে অনিয়ম স্বজনপ্রীতি ও দূর্ণীতি হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং দুর্নীতি দমন আইনে মামলা করা হবে। এছাড়া, দোকান খুলে দেয়ার কথা বলে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী দোকানদারদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, ‘সরকারি আদেশ, নির্দেশ, উপেক্ষা করে মানুষ ঘর হতে বেরিয়ে আসছে। এর ফলে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। ঘরে থাকতে হবে। অন্যকে সচেতন করতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। ফিরে আসা সকল মানুষের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের সাথে মানবিক আচরণ করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন’। 8,474,502 total views, 2,142 views today |
|
|
|